ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ:
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্টটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। একজন থেকে ৪০০ জন পর্যন্ত আক্রান্ত হতে পারে। দেশে এই ভেরিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তখন সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল সেমিনার সাব-কমিটির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘কভিড-১৯ আপডেট’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সংক্রমণ ঠেকাতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসারে এ বছর ঈদে যে যেখানে আছেন সেখানেই ঈদ করুন। এমনকি বর্তমান পরিস্থিতিতে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়াও ঠিক হবে না। সবাইকে দ্রুত ভ্যাকসিন নেওয়া, প্রয়োজনে দুটি মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনা ভাইরাসের ভেরিয়েন্ট নির্ধারণে জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে, এন্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থাও আছে। ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সাফল্যের হার শতকরা ৯৮ শতাংশ। করোনাভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ভ্যাকসিন নিলেও অন্যের সুরক্ষার জন্য মাস্ক পরতে হবে। ৯৯ ভাগ নয়, সবার জন্য শত ভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসির সম্মানিত অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, করোনাভাইরাস শুধু ফুসফুস নয়, হার্ট, কিডনি, লিভার থেকে শুরু করে শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই ভাইরাসটি প্রতিরোধ জরুরি। এ জন্য মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব অবশ্যই মেনে চলতে হবে। সেদিন বেশি দূরে নয়, যেদিন দেশেই কভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন উৎপাদন হবে এবং দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে।

বিএসএমএমইউর অটোল্যারিংগোলজি-হেড অ্যান্ড নেক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ রফিকুল আলম, উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান। প্যানেল এক্সপার্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত, অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আখতারুজ্জামান ও ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উলাহ মুন্সী। সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শহীদুল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সেমিনারে ‘মিউটেশনস অ্যান্ড নিউ ভেরিয়েন্টস অব নভেল করোনাভাইরাস’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. আফজালুন নেছা। ‘চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড আউটকামস অব অ্যাভেইল্যাবল ভ্যাকসিনস এগেইনস্ট নিউ ভেরিয়েন্টস অব কভিড-১৯’ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ তানভীর ইসলাম। ‘প্রেজেন্টেশন অ্যান্ড ট্রিটমেন্ট ডিফিকালটিস অব নিউয়ার ভেরিয়েন্টস’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজাশিস চক্রবর্তী।

সেমিনারে জানানো হয়, ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশনের কারণে বিভিন্ন ধরনের ভেরিয়েন্টের উৎপত্তি হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো ভেরিয়েন্ট সংক্রমণ, ভোগান্তি, জটিলতা ও মৃত্যুহারের বিবেচনায় অনেক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ভেরিয়েন্টগুলো বিভিন্ন মাত্রার শক্তিশালী হলেও ভ্যাকসিন অবশ্যই নিতে হবে। কারণ ভ্যাকসিন নিলে সব ধরনের ভেরিয়েন্ট থেকে কমবেশি রক্ষা পাওয়া যাবে।